শিক্ষকতা ছেড়ে রাজনীতিতে আমি সেদিনই যুক্ত হব, যেদিন আমি বুঝতে পারব, ‘শিক্ষকতার মাধ্যমে আমি মানুষের যতটুকু উপকার করার সামর্থ্য রাখি, ততটুকু আমি করতে সক্ষম হয়েছি। তাই এখন মানুষের উপকারার্থে রাজনীতিতে জীবন বিলিয়ে দিতে কোন সমস্যা নেই।
‘যতদিন আমি শিক্ষক, ততদিন আমি রাজনীতিবিদ নই।
কারণ, শিক্ষকতা আর রাজনীতি দু’টোই এমন পেশা, যেগুলো মনকে সারাটা সময় আচ্ছন্ন করে রাখে।
একজন খাঁটি শিক্ষক সারাদিন ভাবেন ছাত্রদের কথা। কিভাবে তাদের সহজ পদ্ধতিতে পড়ানো যায়, উত্তমরূপে গড়ে তুলা যায় এরকম অনেক ভাবনাতেই কাটে তাদের সারাবেলা।
আর রাজনীতিবিদ?
তিনি তো গভীর ভাবনায় থাকবেন তার রাজনীতি নিয়ে। কিভাবে রাজনৈতিক ভাবনাগুলো গুছিয়ে নেওয়া যায়? মানুষের মাঝে সেগুলো ছড়িয়ে দেওয়া যায়?
তার কাছে তখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় দুইটি। মানুষ আর সময়। যত বেশী মানুষকে যত দ্রুত বুঝানো যাবে, ততটাই সফলতা।
এখন আমি যদি শিক্ষকতার সময় রাজনীতিতে যুক্ত হই, তাহলে কী হবে?
হবে এমন ক্ষুধার্তর মতো অবস্থা, যার সামনে লোভনীয় খাবার কিন্তু খেতে পারছে না।
কারণ আমি ছাত্রদের সামনে বলতে পারব না রাজনীতির কথা।
এমন না যে, ছাত্রদের সামনে রাজনীতির কথা বলে লাভ নাই। বাহ্যত অনেক লাভ। আমি যাই বলি না কেন, ছাত্ররা তাতে সায় দিবে। আর প্রতিটি কথার পর ‘ঠিইক’ ও ‘সহমত’ শুনতে কার না ভালো লাগে?
কিন্তু আমি তো বাস্তবতাও জানি। জানি ‘ঠিক’ শব্দটি ছাত্ররা যতটা না কথাগুলোর গুরুত্ব উপলব্ধি করে বলবে, তার চেয়ে বেশী বলবে আমার মনকে খুশি করতে।
অথচ আমি যদি পুরোদস্তর রাজনীতিবিদ হই, তাহলে আমার রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা হবে অন্যরকম।
আমি শিখতে পারব, মানুষের সামনে কিভাবে রাজনৈতিক কথাবার্তা তুলে ধরতে হয়। তারা যেহেতু আমার সব কথায় ‘ঠিক’ বলবে না, তাই তাদের চেহারা দেখে বুঝে নিব যে, তারা আমার কোন কথায় খুশি হয় এবং কোন কথায় অখুশি হয়?
ছাত্ররা যেখানে প্রতিদিন একই, বিপরীতে প্রতিদিন আমার শ্রোতা হতো ভিন্ন ভিন্ন। যাদের মধ্যে এমন মধ্যে অনেকে থাকতে পারে, যাদের মনে আমার কথাগুলো নাড়া দিবে। ছাত্রদের সামনে বসে বিশ্বজয় করার চেয়ে যেটা আমার রাজনৈতিক সফলতার জন্য বেশী গুরুত্বপূর্ণ।
শুধু তো আমার লাভ না। ছাত্রদেরও লাভ। শিক্ষক রাজনীতিবিদ না হলে তার পূর্ণ মনোযোগ থাকবে ছাত্রদের পড়াশোনায়। তিনি রাজনীতির আলাপ করে ছাত্রদের একাগ্রতা নষ্ট করবেন না। রাজনৈতিক কোন সভা-সমাবেশের কাজে ব্যবহার করে ছাত্রদের জীবনের মূল্যবান সময় নষ্ট করবেন না।
তাই ইনশাআল্লাহ্, ছাত্রদের শিক্ষাজীবন এবং আমার রাজনৈতিক জীবনকে সাফল্যমণ্ডিত করার স্বার্থেই আমি কখনো শিক্ষক অবস্থায় সরাসরি রাজনীতিতে যুক্ত হব না।
শিক্ষকতা ছেড়ে রাজনীতিতে আমি সেদিনই যুক্ত হব, যেদিন আমি বুঝতে পারব, ‘শিক্ষকতার মাধ্যমে আমি মানুষের যতটুকু উপকার করার সামর্থ্য রাখি, ততটুকু আমি করতে সক্ষম হয়েছি। তাই এখন মানুষের উপকারার্থে রাজনীতিতে জীবন বিলিয়ে দিতে কোন সমস্যা নেই।’
Facebook Comments