কিছু সময় পড়ালেখা না করাটাও জরুরী

পড়ালেখা

কিছু সময় পড়ালেখা না করাটাও জরুরী

পড়া শেখার সময়। একমনে পড়ছে সব ছাত্ররা।

হঠাৎ

-এই ওঠো, সবাই ওঠো। যাও, ঐ রুমে গিয়ে দশ মিনিট বিশ্রাম নিয়ে আবার এসো।

এক মিনিট পর

-এই তুমি উঠোনি কেন?

-আমি একটু পড়ি? আমার বিশ্রাম লাগবে না।

-না, ওঠো। দশ মিনিট পরে এসে পড়তে বসো। এখন ওঠো।

পিছনের সারিতে আরও একজন বসে আছে।

-তোমার কী?

-আমি পড়ছি না তো। লিখছি।

-তোমাদের লেখার জন্য তো ভিন্ন সময় আছে। এখন ওঠো। এখন লেখার দরকার নেই।

ওরা লিখতে, পড়তে চাচ্ছে। আমি দিচ্ছি না।

কেন?

বিষয়টা ওদের একটু বুঝিয়ে বলা দরকার।

নবিজী সা. বলেছেন, ‘এক পায়ের জুতোর ফিতে ছিঁড়ে গেলে শুধু অন্য আরেক পায়ে জুতো পরে না হাটতে।’ এই নিষেধের একটা কারণ, এভাবে হাঁটাটা দৃষ্টিকটু। মানুষ খারাপ ভাববে। নিজের সম্পর্কে কাউকে খারাপ ভাবার সুযোগ দেওয়া উচিৎ না। অনেক হাদীস থেকেই বিষয়টা বুঝা যায়।

বিশ্রাম শেষ।

প্রশ্ন করলাম, ‘বলো তো, আযানের বাক্যগুলোর মধ্যে কোন দুই বাক্য আমাদের সবচেয়ে বেশি মনে থাকে?’

পাঠদান বা কোন বিষয় বুঝা বা বুঝানোর ক্ষেত্রে প্রশ্ন করাটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। প্রশ্ন করে অনেক অস্পষ্ট বিষয়ে ছাত্ররা স্পষ্ট ধারণা লাভ করে। তেমনি প্রশ্ন করে শিক্ষক ছাত্রদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে সক্ষম হন, বুঝতে পারেন, ছাত্ররা বিষয়টা ঠিক বুঝল কিনা।

আমার ছাত্ররা তখন আযানের বাক্যগুলো মনে করার চেষ্টা করছে। চেহারা দেখেই বুঝা যাচ্ছে, সবাই আমার প্রশ্নটির উত্তর দিতে আগ্রহী। আমার প্রশ্ন করার উদ্দেশ্য সফল। সবার মনোযোগ আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছি। উত্তরটা এবার আমিই বলে দেই।

‘আযানের প্রথম ও শেষের বাক্যঃ আল্লাহু আকবার আর লা-ইলাহা ইল্লালাহ, বাক্যটি দুইটি আমাদের সবচেয়ে বেশি মনে থাকে। কেন জানো?’

ছাত্রদের চেহারায় আমার চোখ। তারা জানে না তবে জানতে আগ্রহী।

‘আসলে আমাদের ব্রেন কোন বিষয়ের সেই অংশ সবচেয়ে বেশি মনে রাখে যেটা আমাদের কাছে সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে এবং সেই অংশ যেটা শুরুতে বা শেষে থাকে।’

‘এখন মনে করো, আমাদের পড়ার সময় তিন ঘণ্টা। এখন আমরা যদি পুরোটা সময় একসাথে পড়ি, তাহলে আমরা শুরু ও শেষের সময় পেলাম মাত্র একটা করে। কিন্তু আমরা যদি তিন ঘণ্টার মধ্যে ছোট একটা বিশ্রাম নেই, তাহলে শুরু ও শেষের সময় পাব দুইটা করে। যদি দুইবার বিশ্রাম নেই, তাহলে শুরু ও শেষের সময় পাব তিনটা করে।’

‘তাহলে কি পাঁচ মিনিট পর পর বিশ্রাম নিব?’ না, সেটা না। অবশ্য বিশ্রাম কখন নেওয়া হবে, সেটা ছাত্রদের জানায় ফায়দা নেই। ছাত্রদের সামনে কোনো বিষয়ের ততটুকুই আলোচনা করা উচিৎ, যেটা তাদের জন্য উপযোগী।

আমি চাপকলের নিচে ছোট গ্লাস ধরে যদি জোরে জোরে চাপ দেই, বেশিরভাগ পানিই বাহিরে পড়ে যাবে। আমাকে আগে বুঝতে হবে, চাপকলের নিচে কী আছে? ছোট গ্লাস না বড় বালতি? ছোট গ্লাস ধরে অনেক চাপ দিলাম অথচ গ্লাস ভরে বেশিরভাগ পানিই বাহিরে পড়ে গেল। কী লাভ এই কষ্ট করে? ছাত্রদের সামনে এমন কথা বলা, যেটুকু তাদের জন্য ফায়দাজনক নয়, এমন কথা তাদের সামনে বলব না। খুব চেষ্টা করছি এ থেকে বেঁচে থাকার। নিজে কষ্ট করব, ছাত্রদের সময় নষ্ট করব অথচ ফায়দা হবে না! কী দরকার?

বিশ্রাম কখন লাগবে, এটা ছাত্রদের সামনে বসে থাকা শিক্ষকই ঠিক করবেন বা একাকী পড়লে ছাত্র নিজেই ঠিক করবে। একেকদিন একেসময়। অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে। এটা নির্ভর করে অনেক কিছুর উপর? ছাত্র কি পড়ছে, না লিখছে? মুখস্থ করছে, না বুঝার চেষ্টা করছে? পড়তে পড়তে কি ক্লান্ত হয়ে গিয়েছে? এরকম অনেক বিষয় সামনে রাখতে হবে। তবে এর পরেও পড়ার একটা সময় আছে, যেটার দিকে লক্ষ্য রাখা উচিৎ। ত্রিশ মিনিটের কম পড়ে বিশ্রাম নেওয়া উচিৎ না। আবার টানা দুই ঘণ্টার বেশিও পড়া উচিৎ না। বিশ্রাম যদি হয় দুই-তিন ঘণ্টা পড়ার মাঝখানে, তাহলে যতক্ষণ পড়া হয়েছে তার পাঁচ বা ছয় ভাগের এক ভাগ সময় বিশ্রাম নিবে। আর বিশ্রাম যদি দুই তিন ঘণ্টা পড়ার পরে, তাহলে অবশ্যই আধাঘণ্টা বিশ্রাম নেওয়া উচিৎ।

সেই সাথে এই বিশ্রামের সময়ে কী করা হবে, সেটাও গুরুত্বপূর্ণ। এমন কিছু করতে হবে, যার ফলে কিছু সময়ের জন্য ভুলে যাওয়া যাবে পড়াশোনার কথা। আবার এমন কিছুও করা যাবে না, যার ফলে মনোযোগ অন্য কিছুতে আবদ্ধ হয়ে পড়ে। হাটা, দৌড়ানো, হালকা নাস্তা খাওয়া, পানি পান করা, অযু করা ইত্যাদি কাজগুলো বিশ্রামের জন্য বেশি উপযোগী। অপরদিকে পেপার পড়া, নেট ব্রাউজিং, আড্ডাবাজি ইত্যাদি বিশ্রামের মূল উদ্দেশ্যকেই নষ্ট করে দেয়। আরেকটা বিষয় হল, হালকা ঘুম। ছোট-খাটো বিশ্রামের সময় কখনোই ঘুমিয়ে পড়া উচিৎ না। এটা বিশ্রাম পরবর্তী সময়ে ক্লান্তি ও আলস্যতার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

আলহামদুলিল্লাহ, প্রায় প্রতিদিন বিশ্রামের পরে দেখি ছাত্ররা চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। তাদের চাঙ্গাভাব আর পড়ার আওয়াজ শুনে আমার হৃদয় আনন্দে ভরে যায়। এই আনন্দগুলোই আনন্দময় করে তুলে আমার #শিক্ষকতার_দিনগুলো

Facebook Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back To Top
error: Content is protected !!