যাদের ক্ষেত্রে অভিভাবকেরা হাল ছেড়ে দিয়েছিলেন…

অভিভাবকেরা

যাদের ক্ষেত্রে অভিভাবকেরা হাল ছেড়ে দিয়েছিলেন…

– কী খবর তোমার?

– জি, হুজুর, আলহাদুলিল্লাহ ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন?

– ভালো আছি, আলহামদুলিল্লাহ্‌। তোমার ফ্যামিলির কী খবর?

– হুজুর, ফ্যামিলি তো অনেক খুশি আমার উপর।

– কেন? কী হয়েছে?

– এই যে আমি ভালোকরে পড়াশোনা করছি, এই কারণে।

– তুমি তো সবসময়ই ভালোকরে পড়াশুনা করো।

– না, হুজুর। আমি আগে যেই দুষ্ট ছিলাম। ফ্যামিলি ভেবেছিল, আমার আর পড়াশুনা হবে না।

– কী বলছো তুমি? এত চেঞ্জ হলে কীভাবে?

– আমি নিজেও জানি না হুজুর।

বন্ধের সময়টাতে ফোনে কথা বলছিলাম এক ছাত্রের সাথে।

এরকম আরেকজন। ভর্তির ও সময় শুনলাম অভিভাবকের হতাশার কথা। ছেলেকে হাফজ বানাতে চেয়েছিলেন কিন্তু পারেননি। ছেলের ভবিষ্যৎ নিয়ে তিনি ছিলেন খুব চিন্তিত।

এবং এরকম আরও একজন। বাবা যখন তাকে রেখে যাচ্ছিল, সে কেঁদেকেটে অস্থির। ভেবেছিলাম, তাকে বোধহয় আর রাখা যাবে না।

কিন্তু না…..যেই তিনজনের কথা বললাম, এই তিন জনই এখন সেই ছাত্রদের অন্তর্ভুক্ত, যারা সবচেয়ে ভালো পড়া পারে।

কিভাবে সম্ভব হল এই কাজ?

যাদের ক্ষেত্রে অভিভাবকেরা হাল ছেড়ে দিয়েছেন, তাদের ক্ষেত্রে দুইটি কাজ করা জরুরী।

যে সাবজেক্ট পড়ানো হবে, সেটাতে তাদের প্রচণ্ড আগ্রহী করে তোলা। আর তাদের ভিতর থেকে অতীতের হতাশাগুলো ঝেড়ে ফেলা।

যেমন, আমি আরবী ভাষা পড়াই। প্রথমেই তাদের মাঝে আরবী ভাষা শেখার আগ্রহ তৈরি করে দিলাম। বললাম, আরবী ভাষা শিখলে তোমরা কোরআন হাদীসের অর্থ নিজে নিজেই বুঝতে পারবে ইনশাআল্লাহ।

হাফেযদের বললাম, এতদিন কোরআন তিলাওয়াতে তোমরা যে স্বাদ পেয়েছো, যদি প্রতিটা শব্দ তিলাওয়াতের সাথে সাথে অর্থ বুঝো, তাহলে তিলাওয়াতের স্বাদ বহুগুণ বেড়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।

যারা হাফেজ না তাদের বলি, আরবী জানালে হাফেয হওয়াটা খুব সহজ। তোমাদের মা-বাবার আক্ষেপটা আর থাকবে না ইনশাআল্লাহ।

এভাবে বলি, আরবী ভালোভাবে শিখলে উপরের ক্লাসগুলোর পড়াশোনাও তোমাদের জন্য অনেক সহজ হবে ইনশাআল্লাহ। বছর শেষের ইংরেজি কোর্সও ইনশাআল্লাহ তোমাদের কাছে পানির মতো মনে হবে।

সেই সাথে অতীতের হতাশাগুলো ঝেড়ে ফেলতে বলি। বলি, অতীতে ভালোকরে পড়তে না, পড়া পারতে না। এসব ভুলে যাও। মনে করো, জীবনটা নতুনভাবে শুরু করার সুযোগ পেয়েছো। এটা কাজে লাগাও।

এই কথাগুলো কিন্তু প্রচণ্ড কাজ করে মনে এবং এভাবেই প্রতিনিয়ত তাদের মনকে পড়াশোনার উপযোগী করে তোলার চেষ্টা করেছি আর অনেকটা সফলও হয়েছি বলা যায়।

এছাড়া অহংকারী ও বিশেষ স্বভাবের কিছু মানুষ ছাড়া আমি সব মানুষকে ভালোবাসি। যারা অফলাইনে-অনলাইনে আমার পাশে ছিলেন, তারা হয়তো বিষয়টা জানেন। যেহেতু ছাত্রদের সাথে আমি বেশি সময় কাটাই, তারাও আমার ভালোবাসা টের পায়। সম্মান করে। তাই যখন আমি বা আমার সহকর্মী তাদের সামনে থাকি না, তারা পড়তে থাকে। দুয়েকজন ছাড়া সবাই খুব সতর্ক থাকে। এমন যেন কিছু না হয়, যার ফলে আমি কষ্ট পাব।

আমার আর আর ছাত্রদের মাঝে এই ভালোবাসার সম্পর্কটাও বোধহয় বড় একটা কারণ। যে কারণগুলো ছাত্রদের জীবনে ভালো পরিবর্তন এনে দিয়েছে।

১০/৮/২০২১

Facebook Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back To Top
error: Content is protected !!